কেমনে শুধিব এ ঋণ - ভাবের আতিশায্যে ভাষা মূল্যহীন
২৩ মার্চ দুপুরের পর মেধাবী শিক্ষার্থী তৌফিককে নিয়ে যশোর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। মানবিক এ আবেদনে ২৩ জন পোস্টটি শেয়ার করেছিলেন, অনেকে কমেন্টস করেছিলেন অনেকে লাইক দিয়েছিলেন। ঐ দিনেই স্যার পোস্টে লিখেছিলেন তৌফিকের পড়াশোনার ভার নিবে যশোর জেলা প্রশাসন। স্যারের এই মহতী ঘোষনায় সবাই অভিভূত হয়েছিলাম। কিন্তু আজ স্যারের প্রত্যাশার চাইতে প্রাপ্তি যোগে ভাষাহীন হলাম। গতকাল এডিসি শিক্ষা ও আইসিটি পারভেজ হাসান স্যার জানিয়েছিলেন আজ সকালে স্যার আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন। তৌফিক কে নিয়ে যেন সময় মত হাজির হই। সুপ্রভাত জানাতেই অফিসের প্রথম প্রহরে আমরা হাজির। স্যার তৌফিককে বুকে টেনে নিলেন। তার সার্বিক খোঁজ খবর নিলেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তখন কেউ প্রবেশ করলে থমকে যেতেন এই ভেবে ডিসি স্যার হয়ত তাঁর পরিবারের কারো সাথে কথা বলছেন। আমি তখন নির্বাক, ভাষাহীন। তৌফিকের চোখের কোনা সবে ভিজতে শুরু করেছে। স্যার তৌফিকের হাতে তুলে দিলেন ২৫ হাজার টাকার শিক্ষা সহায়তা। বললেন এইটা শেষ নয় শুরু মাত্র। অভিভাবক হিসাবে স্যার তৌফিক কে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করে যাবেন যতদিন না তৌফিক মানুষের মতো মানুষ হয়। স্যার তৌফিককে বললেন ততক্ষনাত ব্যাংকে একটি একাউন্ট খোলার জন্য। আমাকে বললেন ওকে এ ব্যাপারে সহায়তা করতে। তৌফিক কিছু বলার আগেই স্যার বললেন নতুন একাউন্ট করতে কত টাকা লাগে। বললাম স্যার নুন্যতম ৫'শ টাকা। স্যার মানিব্যাগ থেকে ৫ শত টাকার নোট বের করে দিয়ে বললেন ওকে একটা একাউন্ট খুলে দাও।
আমাদের তুহিন তৌফিককে বারবার তাগাদা দিচ্ছিল হাসি হাসি মুখ করেন তৌফিক ভাই একটা ছবি নেব। কিন্তু শত চেষ্টায়ও তৌফিক হাসতে পারেনি। ওর চোখে তখন আনন্দ অশ্রু। কয়েক দিন আগেও যার চোখে অমাবশ্যার ঘোর অন্ধকার আজ সেখানে খুশীর আলোর ঝলকানি। দারিদ্র্যতার কালবৈশাখীর তান্ডবে নিভতে বসেছিল শিক্ষা নামক আলোকময় স্বপ্নীল সলতেটি।মঙ্গল প্রদীপ হয়ে ওর জীবনে আসলেন যশোর জেলা প্রশাসক ড. মো: হুমায়ুন কবীর স্যার। অনলাইনে একটি আবেদন এত সহজেই একটি জীবনকে বদলে দেবে কয়েক বছর আগে আগ বাড়িয়ে কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। তৌফিকের বাবা কে আমি কখনো দেখিনি। স্যারের মুখটি তখন আমার চোখে প্রতিফলিত হচ্ছিল বাবার মতো মমতাময় একজনকে। একজন জেলা প্রশাসক থেকে চকিতেই বাবার মতো বটবৃক্ষ হয়ে উঠে সন্তানের অনাগত সমৃদ্ধ জীবন কামনা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহুর্ত। শুধু কারো পাশে দাঁড়ানো নয় স্যারের কাছ থেকে শিখলাম কিভাবে দায়িত্বশীল হতে হয়। ভালো মানুষ হতে যা একান্ত অপরিহার্য্য।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস