দেওয়ানী বিচার প্রশাসন (১৭৮১-৯০)
বিচারক
জনাব হেস্কেলের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার মূল পদবী ও মূল কর্তব্য ছিল একজন দেওয়ানি আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। তবে তার কর্তব্যের এই ক্ষেত্রটা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাসবিদদের আগ্রহ একটু কম ছিল।৯৬
জমিদারদের নিকট প্রদত্ত মামলাগুলো
১৭৯৩ সালের কোর্ডে অধীনস্থহ দেওয়ানী জাজ ও অন্যান্যদেও ব্যাপারে কিছুই বলা নাই; শুধুমাত্র মুন্সিদেও নিয়োগের কথা ব্যতীত। মুন্সী নিয়োগের আগে পর্যমত্ম ঐ সকল ছোটখাট মামলা জমিদার বা নায়েবরা পরিচালনা করতেন এবং জাজরা এদের কাছে মামলাগুলো প্রেরণ করতেন। ১০০ টাকা মূল্যমানের উপর কোন মামলা জমিদারদের কাছে পাঠানো হত না এবং ঐ জাতীয় মামলার সংখ্যা ছিল নগণ্য।
এই রেফারেন্স প্রদানের পদ্ধতিটি ভালো কাজ করলো না। বেশিরভাগ মামলা ছিল জমি সংক্রামত্ম অথবা খাজনা মুক্ত জমির বিরোধ মামলা, অথবা জমির অতিরিক্ত খাজনা আদায় সংক্রামত্ম অভিযোগ মামলা। এই সকল বিষয়েই জমিদার অথবা নায়েবের সরাসরি স্বার্থ জড়িত ছিল এবং এটা ছিল বাদীদের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই কোন মামলার রেফারেন্স চেয়ে পাঠানোর অর্থ ছিলো মামলার বিচার কাজকে অবজ্ঞা করা। জনাব হেঙ্কেল বিষয়টি ভালোভাবে জানতেন এবং তিনি যশোর আসার অর্ধ বছরের মাথায় ভূষণা ও শাহুজিয়ালের আমিন অথবা অধসত্মন বিচারক নিয়োগ করেছিলেন। এদের কাছে মামলার রেফারেন্স চাওয়া যেত। কিন্তু এই পদ্ধতিটিও সরকারের কাছে আর্থিক বিবেচনায় অনুমোদিত হলো না।৯৭
বিচারকদের সীমিত ক্ষমতা
১৭৮০-৮১ সালে বিচারকদের কতৃত্বাধীন এলাকা বেশী থাকলেও অন্যান্য অফিসারদেও তুলনায় তাদেও করণীয় ছিলো কম। প্রত্যেকটি বিভাগই ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বিচারকদের উপর নির্দেশনা ছিল ভাড়া ও রাজস্ব সংক্রামত্ম কোন বিষয়ে হসত্মক্ষেপ না করার। কারণ এ বিষয়টি ছিল শুধুমাত্র কালেক্টরের এখতিয়ারাধীন। বাণিজ্যিক দপ্তরগুলোর সাথেও তাদের একই ধরণের সম্পর্ক ছিল। যদিও তাদের কর্তৃত্বাধীন এলাকা তবুও অন্যান্য বিভাগের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে তাদের সাথে আলাপ করে নিতে হতো। যদি কোম্পানির উৎপাদনকারীদের মধ্যে দাঙ্গাও বেঁধে যেত তবুও বিচারকরা কোম্পানির উৎপাদন কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতিরেকে কারো উপর সমন জারী করতে পারতেন না। বিচারকদের যৌথভাবে খুবই সতর্কতার সাথে কাজ করতে হতো বিশেষ করে প্রচুর রাজস্ব সংগ্রহের মৌসুমে (যা ছিল শরতের ঠিক পরবর্তী মাস এবং শীতকালীন চাষাবাদের পরবর্তী সময়)।৯৮
আমত্মজেলা সম্পর্ক
তৎকালীন সময় সিভিল জুরিসডিকশন অন্যকোন বিবেচনা ছাড়াই ডিফেন্ডেন্ট রেসিডেন্স দ্বারা শাসিত হতো। একজন বাদীকে বিচারকদের কাছ থেকে বিচারের ত্রম্নটির সংশোধন চাইতে হতো যার কাছে বাদী ছিলেন একজন প্রজা। প্রায়শই মামলাগুলো এক জেলা থেকে অন্য জেলায় হসত্মামত্মর হত এবং মঝে মাঝে যখন দুই বা ততোধিক জমিদারের বাড়ী বিভিন্ন জেলায় থাকত তারা জমি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়ত। বিভিন্ন জেলার বিচারকরা মামলার বিষয়টি নিয়ে চিঠি চালাচালি করতো।
একইভাবে বিভিন্ন ম্যাজিস্ট্রেটগণ একজন আরেকজনকে লাগোয়া দেশের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের মনে করতেন। তারা একজন আরেকজনকে বলতো যে কিছু অপরাধী তার জেলায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং তাকে অনুরোধ করতো সেই আশ্রিত অপরাধীকে ধরে ফেলার জন্য। আশ্রিত অপরাধীকে কোন জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ধরে ফেললে সেই অনুরোধকারী ম্যাজিস্ট্রেটকে ডেকে পাঠাতো ধৃত অপরাধীর অপরাধের বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য এবং অপরাধীকে হসত্মামত্মর করার জন্য।৯৯
১৯৬৭ সালে দেওয়ানী বিচার প্রশাসন
জেলা জজের নেতৃত্বে দেওয়ানী বিচার প্রশাসন পরিচালিত হত। তার অধীনে ছিল ২ জন অধসত্মন জজ এবং ৭ জন মুন্সেফ। ১৯৬৭ সালে যশোরে ১,১২২ টি দেওয়ানী মামলা হয়েছিল।১০০
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস