স্বাধীন রাজা প্রতাপাদিত্য
প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে একটু আলাদাভাবে না বললে যশোরের ইতিহাসের একটা গৌরবময় অংশই না বলা থেকে যাবে। কারণ মোঘল আমলে যশোরে ইনিই প্রধান ব্যক্তি। অনেকে বলে থাকেন প্রাচীন গৌড় রাজ্যের যশ হরণ করে ‘যশোহর’ হয়েছিল। তৎকালীন সময় যশোরের ইতিহাস তাই প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস। প্রতাপাদিত্যের রাজত্বকাল মাত্র ২৫ বছরের হলেও আজ পর্যন্ত তার গৌরবগাঁথা যশোর খুলনা অঞ্চলে বিদ্যমান।
বিক্রমাদিত্য পুত্র প্রতাপাদিত্যের রাজধানী কোথায় ছিলো তা নিয়ে প্রচলিত ৫ টি মত রয়েছে। সতীশচন্দ্র মিত্রের মতে,
১) প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ধুমঘাটের উত্তরাংশ ছিল; কিন্তু বিক্রমাদিত্যের রাজধানী কোথায় ছিল, তা ঠিক নাই। জনাব বেভারিজসহ পাশ্চাত্য লেখকেরা এই মতাবলম্বী।
২) বিক্রমাদিত্যের রাজধানী ধুমঘাটের উত্তরাংশে ছিল এবং প্রতাপের রাজধানী আধুনিক ধুমঘাটের দক্ষিণভাগে অবস্থিত, কিন্তু সে স্থান তখনও ঘোর জঙ্গলাকীর্ণ ছিল। সাধারণ শিক্ষিত সম্প্রদায় এই মতাবলম্বী।
৩) বিক্রামাদিত্যের রাজধানী উক্ত উত্তরাংশে বা ঈশ্বরীপুর অঞ্চলে ছিল; কিন্তু প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল গঙ্গার মোহনায় সাগরদ্বীপ। এই দ্বীপের অন্য নাম চ্যান্ডিকান দ্বীপ। নিখিলনাথ রায় মহোদয় এই মতের প্রবর্তক।
৪) বিক্রমাদিত্যের রাজধানী তেরকাটিতে বা ১৬৯ নং লাটে ছিল; যা তখনও ঘোর অরণ্যের মধ্যে অবস্থিত ছিল। প্রতাপের নতুন রাজধানী ঈশ্বরীপুরের কাছে ছিল। কেউ বা বলেন, পুরাতন রাজধানী ঈশ্বরীপুরে এবং নতুন রাজধানী তেরকাটিতে ছিল। তেরকাটির বাসিন্দারা অনেকেই একথা বিশ্বাস করেন।
৫) প্রাচীন রাজধানী মুকুন্দপুর অঞ্চলে এবং নতুন বা ধুমঘাট দুর্গ ঈশ্বরীপুরের সন্নিকটে অবস্থিত।
এই ৫টি মতের মধ্যে শেষোক্ত মতটি সতীশচন্দ্র মিত্র সঠিক বলে ধারণা করেন। ধুমঘাটে বা ঈশ্বরীপুর অঞ্চলে প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল। এখন যে স্থানকে মুকুন্দপুর বলে, সেখানেই প্রথম বিক্রমাদিত্যের রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার নাম ছিল-যশোহর। পরে প্রতাপের ধুমঘাট রাজধানী সমৃদ্ধিশালী হলে, তারও নাম হয়-যশোহর। ক্রমে কীর্তিমন্ডিত এই উভয় রাজধানী পরস্পর মিশে গিয়েছিল এবং আট দশ মাইল নিয়ে সমস্ত স্থানটাই ‘যশোহর’-এই সাধারণ নামে পরিচিত হল। নতুবা যশোহর নামে কোন চিহ্নিত গ্রাম নাই।
১৫৮৭ সালে প্রতাপাদিত্য ঈশ্বরীপুরের কাছে তার নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠা করলেন ও যশোরেশ্বরী দেবীর মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন। সেখানেই তিনি ইমঘাট দূর্গ ও রামপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। বসন্তরায়ের উদ্যোগ মহাসমরোহে নতুন রাজধানীতে প্রতাপাদিত্যকে অভিষেক প্রদান করা হয়। রাজ্যাভিষেকের সময় বার ভূঁইয়াদের অনেকে যশোরে এসেছিলেন এবং প্রতাপাদিত্যের কাছে বঙ্গের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি করেছিলেন। প্রতাপাদিত্য দেখছিলেন যে সম্রাট আকবর আগ্রার রাজদরবার, রাজনীতি ও রাজপরিবারের আত্মকলহ এসব বিষয়ে ব্যস্ত রয়েছেন এবং এর ফলে সমগ্র ভারতবর্ষে বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠেছে। এই সুযোগে প্রতাপাদিত্যও সৈন্যগঠন ও সীমান্ত রক্ষার জন্য সৈন্যবাহিনীকে প্রস্তুত করতে শুরু করলেন। প্রধানত যেসকল কারনে, (সতীশচন্দ্র মিত্রের মতে) তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তা হলো-
১। আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রধান্য স্থাপন করা।
২। পাঠানদের পক্ষ সমর্থন করা, যারা মোঘলদের নিকট পরাজিত হয়েছিলেন।
৩। বঙ্গদেশে হিন্দু শক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
৪। শুধু মোঘলদের নয়, মগ ও ফিরিঙ্গি দস্যুদের পাশবিক নির্যাতন থেকে তার রাজ্যের মানুষকে রক্ষা করা।
প্রতাপ ধীরে ধীরে তার নতুন রাজধানী গুছিয়ে নিতে লাগলেন এবং তৎকালীন বঙ্গের অন্যান্য ভূঁইয়াদের সাথে আলাপ করতে লাগলেন যে কিভাবে তারা একত্রিত হয়ে মোঘলদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পারেন। ভূঁইয়াদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতাপের এই বিদ্রোহী চেতনার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করলেও অনেকেই দূরত্ব বজায় রাখলেন। এমনকি প্রতাপের একান্ত সহকর্মী হিসেবে পরিচিত বিক্রমাদিত্যের বন্ধু বসন্ত রায়ও এই বিদ্রোহে যোগদান করলেন না। তিনি জানতেন প্রতাপ ও তার দু’একজন মিত্রের মনে যে স্বাধীনতার চেতনার বিকাশ ঘটেছে তা সমগ্র দেশ না জাগলে বিফলে যাবে। তিনি প্রতাপকে এ বিষয়টি বুঝাতে ব্যর্থ হলেন। প্রতাপ তার উপর মনক্ষুন্নও হয়েছিলেন। বসন্ত রায় গঙ্গাতীরের রায়গড় দূর্গে স্থানান্তরিত হন এবং যশোরের ৬ আনা অংশের শাসনকার্য করতে থাকেন। এদিকে প্রতাপ ১৫৯৯ সালে মোঘলদের বশ্যতা অস্বীকার করে যশোরের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এই স্বাধীনতা ঘোষণার কিছু বৎসর আগে প্রতাপাদিত্য তার পিতৃতুল্য বসন্ত রায়কে আনুমানিক ১৫৯৪-৯৫ সালের দিকে হত্যা করে তার নিজ চরিত্রে অমোচনীয় কলঙ্ক লেপন করেন।
কথিত আছে প্রতাপাদিত্য সেসময় নিজ নামে মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর প্রতাপাদিত্যের নিজ শাসিত রাজ্যেও বহু বিস্তৃত হয়ে পড়েছিলো। ১৬০০ খ্রিঃ প্রতাপের ক্ষমতা ও খ্যাতি পুরো ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছিল। কবিবর ভারত চন্দ্র তাই লিখেছিলেন-
‘যশোর নগর ধাম প্রতাপ আদিত্য নাম
মহারাজা বঙ্গজ কায়স্ত
নাহি মানে পাতশায়, কেহ নাহি আটে তায়
ভয়ে যত ভূপতি দ্বারস্থ
বরপুত্র ভবানীর প্রিয়তম পৃথিবীর
বায়ান্ন হাজার যার পল্লী
ষোড়শ হলকা হাতি অযুত তুরঙ্গ সাতি
যুদ্ধকালে সেনাপতি কালী।’
সে সময় সকলে বিশ্বাস করতো যে দ্বৈববল ছাড়া কেউ এমন বলশালী হতে পারে না। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ কাশী হইতে রাজমহলে আসলেন এবং বঙ্গদেশকে প্রকৃতভাবে মোঘলদের করতলে নিয়ে আনার জন্য সর্বরকম আয়োজন শুরু করেন। প্রায় ২৫ বছর পাঠানরা বঙ্গে পরাজিত হলেও প্রতাপাদিত্য ও অন্যান্য ভূঁইয়াগণের কারণে সেই পরাজয়ে মোঘলদের কোন লাভ হয়নি। তাই আকবর তার সর্বপ্রধান সেনাপতিকে সবরকম সহযোগিতা দিয়ে পুনরায় বঙ্গে প্রেরণ করেন। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিশাল সৈন্যবহর নিয়ে যশোর অভিমুখে যাত্রা করেন। মানসিংহের এ যাত্রা সম্পর্কে ভারতচন্দ্র বলেন
‘আগে পাছে দুই পাশে দু’সারি লস্কর।
চললেন মানসিংহ যশোহর নগর।।
মজুন্দারে সঙ্গে নিলা ঘোড়া চড়াইয়া।
কাছে কাছে অশেষ বিশেষ জিজ্ঞাসিয়া।’
মানসিংহ কালিন্দি নদী পার হয়ে বসন্তপুরে ছাউনি করলেন এবং দেখলেন যে প্রতাপাদিত্য তার চারিদিকে সৈন্য সাজিয়ে যুদ্ধের সমস্ত আয়োজন করে রেখেছেন। বসন্তপুর ও শীতলপুরের পূর্বভাগে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো। অগনিত দিন ধরে এ যুদ্ধ সংঘটিত হলো এবং মানসিংহ বিজয়ী হয়ে প্রতাপাদিত্যকে বন্দি করেছিলেন। মানসিংহ প্রতাপকে চিনতেন এবং অত্যন্ত ভালোবাসতেন। উড়িষ্যাভিযানে প্রতাপের বীরত্বের কথা তার মনে ছিলো। তিনি যশোর যুদ্ধে বঙ্গীয় বীরের অসাধারণ সমর কৌশলে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি নিজে মহাবীর, তাই বীরত্বের মর্যাদা বুঝতেন। যুদ্ধ শেষে জয়লাভ করলেও তিনি প্রতাপাদিত্যর সাথে সন্ধি করেছিলেন। প্রতাপাদিত্য যশোর রাজ্যের ১০ আনা অংশে (বাকী ৬ আনা বসন্তরায়ের ছেলে কচু রায়) মোঘলদের সামন্ত রাজা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন।
মানসিংহ স্বাধীনতার চিহ্ন পতাকা ও মুদ্রা বিলুপ্ত করবার আদেশ দিয়েছিলেন। মানসিংহের এই অভিযানের কিছু বছর পর ১৬০৯ খ্রিঃ আকবরের পুত্র সম্রাট জাহাংগীর ইসলাম খাঁর নেতৃত্বে পুনরায় বঙ্গে সৈন্য প্রেরণ করেন। সুদীর্ঘ আঁকাবাঁকা নদীপথ পাড়ি দিয়ে মোঘল সৈন্যরা যশোর রাজ্যের সীমান্তে এসে পৌঁছলো। যমুনা ও ইছামতির সঙ্গমে প্রতাপ বাহিনীর সাথে মোঘলদের পুনরায় সংঘর্ষ হয়। তাই প্রতাপের শেষ পতন ইসলাম খাঁর সময় মানসিংহের সময় নয়। প্রতাপাদিত্য মোঘলদের সমন্বিত আক্রমণ প্রতিহত না করতে পেরে আত্মসমর্পণ করেন। ইসলাম খাঁ প্রতাপকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখলেন এবং যশোর প্রদেশকে মোঘল সম্রাজ্যের অন্তর্গত করে নিলেন। এবং যশোর রাজ্যের পতন হলো। শুরু হলো বাংলায় মোঘল যুগ।
তেজস্বিতা, ধর্মনিষ্ঠা ও স্বাধীনতা স্থাপনের চেষ্টা প্রতাপকে এ অঞ্চলের লোকদের নিকটই শুধু নয়, সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষের কাছে অমর করে রাখলো। গুরুদেব রামদাস স্বামী তাই লিখেছেন-
বলিলে যে বঙ্গদেশী প্রতাপের কথা,
শুন গুরুত্ব তার। তেজোবীর্য্যগুণে
প্রতাপ প্রস্তুত ছিলো স্বাধীনতা লাভে,
কিন্তু তা’র জাতি, দেশ না ছিল প্রস্তুত;
জ্ঞাতিবন্ধু বহু তা’র ছিল প্রতিকূল,
তাই হল ব্যর্থ চেষ্টা। মূঢ় সেই নর,
দেশ, কাল , পাত্র মনে না করি’ বিচার,
একা যে ছুটিতে চায়; চরণস্খলনে
নাহি রহে কেহ ধরি’ উঠাইতে তারে।।
এছাড়াও আমরা স্যার জেমস ওয়েস্টল্যান্ডের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি যে, বিক্রমাদিত্যের এক ছেলে ছিল। যার নাম ছিল প্রতাপাদিত্য। তার সম্পর্কে বলা হতো তিনি ছিলেন পৃথিবীর সকল সুন্দর গুণের অধিকারী। প্রতাপাদিত্য তার পিতার মৃত্যুর পরে যশোরের সকল সম্পদের একমাত্র উত্তরসূরী হয়েছিলেন। তিনি ধুমঘাটে একটি শহরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি তার প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেছিলেন সুন্দরবনের সীমানার পবনভূমি পর্যন্ত এবং ২৪ পরগনা জেলার নিকটবর্তী ইছামতি নদীর পূর্ব সীমা পর্যন্ত। ঐ সময় বাংলা ও বাংলার নিচু অংশ ১২ জন ভূপতিদের মাঝে ভাগ করা ছিল। এই ভূপতিদের বলা হতো বার ভূইয়া। প্রতাপাদিত্য এই বার ভূইয়াদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্পদশালী ও প্রভাবশালী ছিলেন। এই বার ভূইয়াদের সকলেই খাজনা দিত এবং দিলির সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করত। এই ১২ জন ভূপতিদের মধ্যে রাজা প্রতাপাদিত্য অগ্রাধিকার পেত তার প্রভাব ও প্রতিপত্তির কারণে। দিনে দিনে প্রতাপাদিত্য আরো ক্ষমতাশীল হয়ে উঠলে তিনি দিল্লির সম্রাটকে খাজনা প্রদান করতে অস্বীকার করেন। আর সে সময়টাতে গোটা বাংলায় এক ধরণের বিশৃঙ্খলা ও বিবাদমান পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল।
দিল্লির সম্রাট আকবর অনেকবার সেনাবাহিনী পঠিয়েছেন এই সকল বিদ্রোহ দমনের জন্য কিন্তু সুন্দরবন প্রতাপাদিত্যকে একটি ভালো অবস্থান দিয়েছিলো যার ফলে সে সহজেই সম্রাটের বিরোধিতা করতে পারতেন। তার এই বিদ্রোহ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চলেছিলো। তবে এই বিদ্রোহ কোন সাধারণ যুদ্ধের মত ছিল না। এই বিষয়ে মুসলিম ঐতিহাসিকগণের নিরবতা এটা প্রমাণ করে যে স্থানীয় বিরোধ মিটানোর জন্য আসলে সম্রাট খুব ছোট একটা সৈন্য দল পাঠিয়েছিলেন। চাঁচড়ার রাজপরিবারের নথি থেকে আরো জানা যায়, খান আজিম নামে আকবরের একজন সেনাপতি প্রতাপাদিত্যের কিছু পরগনা দখলে নিতে পেরেছিলেন। যদিও প্রতাপাদিত্য সেই রাজ শক্তিকে অনেকবার হারিয়েছিলেন কিন্তু এতে করে তার ক্ষমতা ও প্রভাবও অনেক কমে গিয়েছিলো। আকবর তার মহান সেনাপতি মানসিংহকে পাঠিয়েছিলেন এই অভিযানে। অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে, অনেক বনাঞ্চল ধ্বংস করে তিনি প্রতাপাদিত্যকে ধরতে সক্ষম হন। এরপর তিনি প্রতাপাদিত্যের সাথে একটি সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন করেন। প্রতাপাদিত্য বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁ কর্তৃক ১৬০৯ সালে পরাজিত ও ধৃত হন। এইসব ঘটনার তারিখের সত্যতা পাওয়া যায় সেই সময় থেকে যখন আজিম খান ও মানসিংহ যথাক্রমে ১৫৮২-৮৪ ও ১৫৮৯-১৬০৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। যশোর নামটি আসলে সেই সকল স্টেটের সাথে জড়িত যা প্রতাপাদিত্যের দখলে ছিল। ফৌজদার বা মিলিটারি গভর্ণর যারা মির্জানগরে বসতেন তাদেরকেও যশোরের ফৌজদার বলা হত। এমনকি কোর্ট-কাচারীসহ জেলার সদর দপ্তর যখন মুড়লী ও পরবর্তীতে কুশবায় স্থানান্তরিত হলো, যশোর নামটি ঐ স্থানের উপরও আরোপিত হলো। ১৭৮৬ সালে যশোর প্রথম যেদিন জেলা হয়েছিল সেই সময় থেকে আজকের যশোরের সীমানা মারাত্মকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
একনজরে প্রতাপাদিত্য
১৫৫৬-১৬০৫ বাদশাহ আকবরের রাজত্ব।
১৫৬৩-১৫৭২ সুলেমান কররাণী বঙ্গের শাসনকর্তা।
১৫৬০-৬১ গৌড়ে প্রতাপাদিত্যের জন্ম।
১৫৭২-৭৬ দায়ুদ খাঁ রাজা ছিলেন। ১৫৭৬, আকমহল যুদ্ধ ও দায়ুদের মৃত্যু।
১৫৭৪ যশোর-রাজ্যের প্রতিষ্ঠা। ১৫৭৫, গৌড়ের ধ্বংস।
১৫৭৭ যশোর রাজ্যের প্রথম সনদ ও বিক্রমাদিত্যের রাজত্ব শুরু।
১৫৭৬-৭৯ হোসেনকুলি খাঁ বঙ্গের মোগল সুবাদার।
১৫৭৮ প্রতাপাদিত্যের আগ্রা গমন। ১৫৭৭-৭৯, টোডরমল সাম্রাজ্যের উজীর
১৫৮০ বঙ্গে জায়গীরদারদের বিদ্রোহ।
১৫৮০-৮২ টোডরমল বঙ্গের সুবাদার। ১৫৮২, রাজস্বের হিসাব প্রস্তুত।
১৫৮২ যশোর-রাজ্যের সনদ নিয়ে প্রতাপাদিত্যের প্রত্যাগমন।
১৫৮২-৮৪ খাঁ আজম বঙ্গের সুবাদার।
১৫৮৩ বিক্রমাদিত্যের মত্যু।
১৫৮৪ প্রতাপের রাজ্যাভিষেক।
১৫৮৪-৮৭ শাহবাজ খাঁ বঙ্গের সুবাদার।
১৫৮৭ ধুমঘাটে দুর্গ নির্মাণ, যশোরে শবরীর আবির্ভাব ও উদয়াদিত্যের জন্ম।
১৫৮৯-৯৮ মানসিংহ বঙ্গের সুবাদার।
১৫৯৫ রাজমহলে রাজধানী।
১৫৯২-৯৩ প্রতাপাদিত্যের উড়িষ্যাভিযান ও গোবিন্দদেব বিগ্রহাদি নিয়ে প্রত্যাগমন।
১৫৯৫ বসন্তরায় ও গোবিন্দ রায়ের হত্যা এবং হিজলী বিজয়।
১৫৯৬ বাকলার কন্দর্পনারায়ণের সহিত প্রতাপাদিত্যের সন্ধি, হোসেনপুরের যুদ্ধে পাঠানের পরাজয় এবং কন্দর্পের মত্যু।
১৫৯৮-৯৯ মানসিংহের দাক্ষিণাত্য গমন। জগৎসিংহের মৃত্যু, বালক মহাসিংহ বঙ্গের সুবাদার।
১৫৯৯ প্রতাপাদিত্যের স্বাধীনতা ঘোষণা। খৃষ্টান পাদরীগণের আগমন। বঙ্গের প্রথম গীর্জা নির্মাণ। মানসিংহের প্রত্যাগমন ও শেরপুরের যুদ্ধে ওসমানের পরাজয়।
১৬০০ মানসিংহ আগ্রায় গিয়ে সাত-হাজারী মনসবদার হন এবং বহু সৈন্য নিয়ে রাজমহলে আসেন।
১৬০২ রামচন্দ্রের সাথে প্রতাপ-কন্যার বিবাহ ও রামচন্দ্রের পলায়ন। কার্ভালো কর্তৃক সন্দ্বীপ অধিকার এবং দ্বিতীয় যুদ্ধে আরাকান রাজ্যের পরাজয়।
১৬০৩-০৪ মানসিংহের যশোহর আক্রমণ, প্রতাপের সাথে যুদ্ধ ও সন্ধি। কেদার রায়ের হস্তে মোগল সেনানী মান্দারায় ও কিলমকের পরাজয়। মানসিংহের শ্রীপুর যাত্রা। কেদারের পরাজয় ও হত্যা। সুবাদারী ত্যাগ করে মানসিংহের আগ্রায় প্রত্যাগমন।
১৬০৫ আকবরের মৃত্যু ও জাহাঙ্গীরের সিংহাসন আরোহণ।
১৬০৫-০৬ আটমাসের জন্য মানসিংহ বঙ্গে পুনঃপ্রেরিত হন।
১৬০৬-০৭ কুতবউদ্দীন বঙ্গের সুবাদার।
১৬০৭-০৮ জাহাঙ্গীর কুলি খাঁ বঙ্গের সুবাদার।
১৬০৮-১৩ ইসলাম খাঁ বঙ্গের সুবাদার।
১৬০৮ প্রতাপাদিত্যের সাথে ইসলাম খাঁর বজ্রপুরে সাক্ষাৎ ও সন্ধি।
১৬০৯ ঢাকায় রাজধানী স্থাপন।
১৬০৯-১০ মোগল সেনানী ইনায়েৎ খাঁ ও মীর্জা নাথন প্রতাপের বিরুদ্ধে প্রেরিত হন। সালিখার যুদ্ধে উদয়াদিত্যের পরাজয় ও খোজা কমলের মৃত্যু। ধুমঘাটের নৌ-যুদ্ধে প্রতাপের পরাজয় ও ঢাকায় গমন।
১৬১০-১১ ঢাকায় বন্দী থাকবার কিছুদিন পরে প্রতাপ পিঞ্জরাবদ্ধ হয়ে আগ্রায় প্রেরিত হন। পথে বারাণসীতে মত্যু। বয়স ৫০ বছর।
১৬১২ ওসমান খাঁর পরাজয় ও মৃত্যু।
১৬১৩ ইসলাম খাঁর মত্যু।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস