যশোরের ঐহিত্য
¨সাতক্ষীরা হাউজ-জেলা প্রশাসকের বাংলো, যশোর
¨কালেক্টরেট ভবন, দড়াটানা, যশোর
¨যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, উপশহর, যশোর
¨মারকাজ মসজিদ, উপশহর, যশোর
¨শতাব্দী প্রাচীন যশোর পৌরসভা, লালদীঘি পুকুর পাড়
¨রামনারায়ন পাবলিক লাইব্রেরী,
¨নক্সী কাঁথা ও যশোর স্টীচ
¨যশোর ইন্সটিটিউট পাবলিক লাইব্রেরী, টাউন হল ময়দান সংলগ্ন
¨খেজুরের গুড়সহ রসের পিঠা, পায়েশ এ জনপদের মিষ্ঠান্ন ঐতিহ্য
¨যশোরের কই মাছ
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
অনুভূতি ও চিন্তার অপূর্ব বাস্তবায়নের নবরূপকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং বাংলা সাহিত্য ও যেন একই বৃন্তে ফুটে থাকা দু’টি ফুল। সাহিত্যের গতানুগতিক আদর্শ উৎখাত করে নতুন আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবাবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত । নাতিদীর্ঘ জীবনের ভেতর মাইকেল মধুসূদন দত্ত যে আত্মপ্রত্যয় ও আত্মদ্রোহের ছাপ বাংলা সাহিত্যে রেখে গেছেন তা অসাধারণ এবং অবিস্মরণীয়।
বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার আলোকবর্তিকা মাইকেল ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি শনিবার যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী গ্রামে এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছন্দের নানা মাত্রিক পরীক্ষা মিল-বিন্যাস অমিলতা ও যতি স্বাধীনতা দিয়ে মাইকেল বাংলা কবিতার সীমানাকে বহুদূর প্রসারিত করেছে। বাংলা সাহিত্যকে এতদিন যে লোহার বেড়ীর মত পয়ার শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল-সোনার কাঠির স্পর্শে মধুসূদন নিদ্রিত রাজকন্যার ঘুম ভাঙ্গালেন। সাহিত্যে শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ, কৃষ্ণকুমারী, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমা সম্ভব, মেঘনাদ বধ কাব্য, ব্রজাঙ্গঁনা কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য তাঁর অনবদ্য অবদান। তাঁর লেখা বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে আলাদা রূপমাধুর্য যা বাঙালিকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। বাংলা সাহিত্যের এ ক্ষণজন্মা পুরুষ মৃত্যু বরণ করেন ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন, রবিবার।
কালেক্টরেট ভবন
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে যশোর কালেক্টরেটের নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। যশোর কালেক্টরেট স্থাপিত হয় ১৭৮৬ সালে। ১৭৮১ সালে জেলা ঘোষনার পর প্রথম Mr. Tilman Henckell (1781-1789) জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কালেক্টরেটের দায়িত্ব পান। যশোর কালেক্টরেট নিজস্ব ভবন তৈরী হয় ১৮০১ সালে। কালেক্টরেট ভবনটি দড়াটানা, যশোর এ অবস্থিত। এটি শহরের প্রাচীনতম স্থাপনা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি। এই ভবনের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ২০০ বছরের ইতিকথা। ভবনটি বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। বর্তমান ভবনের একতলা স্থাপিত হয় ১৮৮৫ সালে এবং দোতলা নির্মিত হয় ১৯৮২ সালে। গবেষকরা রেকর্ড রুমে পেতে পারেন সিপাহী বিদ্রোহ ও নীল বিদ্রোহের নথি ও নজির তূল্য মামলা।
শিক্ষায় যশোর
মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম উপাদান হচ্ছে শিক্ষা। যশোরে শিক্ষার বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধন সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু হয়েছে। দেড়শত বছরের ও বেশী সময় ধরে এ উন্নয়নের ধারা প্রবহমান। তার পূর্বে সুলতানী ও মোঘল আমলে এ অঞ্চলে মুসলমান ও হিন্দুদের জন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল যথাক্রমে মাদ্রাসা ও টোল। উচ্চ ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরাই নিজ নিজ প্রচেষ্টায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে পরিচালনা করতেন। মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যম ছিল সংস্কৃত। কিন্তু সরকারী চাকুরীর সুবিধার্থে হিন্দু ছাত্ররা ও মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহন করত। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বৃটিশ পরিবর্তিত সামাজিক ব্যবস্থায় এ শিক্ষা ব্যবস্থা অচল বলে প্রতিয়মান হয়, ফলে গড়ে ওঠে পাশ্চাত্য ভাবধারায় আধুনিক স্কুল কলেজ। এ উপমহাদেশে যে প্রথম চারটি স্কুল প্রতিষ্ঠা হয় তার মধ্যে যশোর জেলা স্কুল অন্যতম, এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৩৮ সালে। ১৩২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্থানীয় জমিদার পত্নী ক্যাত্যারিনীর কাছারীতে এর কার্যক্রম শুরু হয়। তখন এর নাম ছিল “যশোর সরকারী মডেল স্কুল”। এছাড়া রয়েছে সম্মিলনী ইন্সটিটিউট, মুনসী মেহেরুল্লাহ একাডেমী, বসুনদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জংগল বাধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়( মোমেন গালার্স স্কুল), মধুসূদন তারা প্রসন্ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, দাউদ পাবলিক স্কুল, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আরো অনেক। এ সকল বিদ্যালয়ে একই শিক্ষাক্রম চালুর প্রয়োজনে বৃহত্তর যশোর জেলায় ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ সালের এক সরকারী আদেশের মাধ্যমে ১৯৬৩ সালে অক্টোবর মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর প্রতিষ্ঠিত হয়। উচ্চ শিক্ষার জন্য যশোরে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, সিটি কলেজ, সরকারী এম,এম কলেজ, নওয়াপাড়া কলেজ, শহীদ মসিউর রহমান ডিগ্রী কলেজ, বি,এ,এফ শাহীন কলেজ উল্লোখযোগ্য। যশোরের শিক্ষা বিস্তাবে যে সব মহামতির অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সতীশ চন্দ্র নাথ, মোঃ আব্দুল রউফ, মোঃ মোবারক আলী, আনসারী, অধ্যক্ষ মুহম্মদ আব্দুল হাই, অধ্যক্ষ মোঃ মোখলেসুর রহমান, মোলভী মোঃ আককাচ আলী, প্রবোধ কুমার মিত্র, মনোয়ার খাতুন, ক্যাপ্টেন করিম উল্লেখযোগ্য।
খেজুরের রস ভান্ডার, যশোর
ঋতু বৈচিত্রের বাংলাদেশে শীত যেন অসে খেজুরের রস আর শীতের পিঠার বার্তা নিয়ে। আর এই শীতকে উপভোগ করতে যশোরের খেজুরের রস ও গুড়ের বিকল্প নেই। খেজুর এর রস ভান্ডার যশোরে রয়েছে ৪৬২৫২৫ টি খেজুর গাছ, যার প্রতিটিতে গাছি শীতের শুরুতেই বাড় ঝুলিয়ে দেয়। শীত কালীন এ চিত্র যেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করে। ৪৮৬.২০ হেক্টর জমির খেজুর গাছে আনুমানিক ২৩১২৬২৫০ কেজি রস আহরিত হয় যা থেকে উৎপাদিত গুড়ের পরিমান ৩৭,০০,২০০ কেজি। যশোরের রসের স্বাদ যেমন সুমিষ্ট তেমনি এর তৈরী গুড় ও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। তাই যশোর যেন খেজুরের রস ভান্ডার হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিত।
সবজি ও ফুলের যশোর
নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া আর মিষ্টি পানির জন্য যশোরে সবজি ও ফুল ভালো জন্মে। এ কারনে এ জেলাতে বানিজ্যিক ভাবে সবজি ও ফুলের চাষ ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। জেলার ১৪৩৫০হেঃ জমিতে সবজির মোট ফলন হয় ৩,২১,৯০৩ মেঃ টন। এসব সবজির মধ্যে আছে ফুল কপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, লালশাক, সবুজ মাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, চাল কুমড়া, টমেটো, মুলা, বরবটি, ডাটা, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, শিম, চিচিংগা, ঝিংগা, করলা, উচ্ছে, গাজর, শালগম, ওলকটি, বাটিশাক, ক্ষিরাই, পেঁপে, কাচকলা, বিচিকলা, মানকচু, মেটে আলু, লতিরাজ, পানিকচু, ও বাংশী। এছাড়া ৫৪২.৫ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদিত ফুলের সংখ্যা ১২০,২১,৪৭,৯৫৪ যার মধ্যে আছে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, গাঁদা, জারবেরা, ডালিয়া, কচমচ, থোজা ইত্যাদি। যশোরের এই সবজি ও ফুলের উৎপাদন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস