১৭৬৫ সাল পর্যন্ত যশোর ইউসুফপুর এবং সৈয়দপুর জমিদারীর অধীনে মোট ১৩৬৫ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এ অংশে যশোর জেলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলা এবং ২৪ পরগনার আংশিক এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে বার বার যশোরের সীমানা পরিবর্তিত হয়ে একটি পৃথক এবং পূর্নাঙ্গ জেলায় রুপান্তরিত হয়েছে।
১৭৮৬ সালে যশোর (বৃহত্তর যশোর জেলা), ফরিদপুর, ইছামতি নদীর পূর্বতীর পর্যন্ত ২৪ পরগনা জেলার অংশ নিয়ে যশোর জেলা পুনর্গর্ঠিত হয়। একজন কালেক্টর ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ঐ এলাকার জন্য নিয়োগ করা হয়। ১৭৯৩ সালে ভূষনা, নওয়াপাড়া এবং কুষ্টিয়া যশোর জেলার সংগে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৯৪ সালে ২৪ পরগনার কিছু অংশ নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হলে ঝিকরগাছা পর্যন্ত যশোর জেলার পশ্চিম সীমানা নির্ধারিত হয়। ১৮১৪ সালে ফরিদপুরকে যশোর হতে পৃথক করা হয়। ১৯২৮ সালে পাংশা, কুষ্টিয়া ,মধুপুর ও খোকশাকে পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৮৬০-৬১ সালে নীলবিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা, ঝিনেদা ,মাগুরা, নড়াইল এবং যশোর সদরকে হেড কোয়ার্টার গণ্য করে পৃথক মহকুমা সৃষ্টি করা হয়। ১৮৬১ সালে কচুয়া থানা বাকেরগঞ্জ থেকে যশোরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৮২ সালে খুলনা ও বাগেরহাটকে যশোর জেলা হতে পৃথক করা হয়। ১৮৮৩ সালে বনগাঁও বহকুমাকে যশোর জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যশোর জেলার হেডকোয়ার্টার প্রথমে মুরালীতে স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৭৯০ সালে বর্তমান স্থানে হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয়।
ওয়ারেন হেস্টিংস১৭৭২ -১৭৭৪ সাল পর্যন্ত সর্বাধিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে একজন কালেক্টর নিয়োগ করেন , তার নাম মিঃ স্যামুয়েল চার্টার। নিয়োগকৃত ব্যক্তি একাধারে কালেক্টর, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, এবং দেওয়ানী আদালতের ক্ষমতা সম্পন্ন ছিলেন।১৭৭৪ সালে কালেক্টর পদ বিলুপ্ত করে প্রভিনসিয়াল কাউন্সিলগঠনকরা হয়। একজন ব্যক্তিই জজএবং ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজ করতেন। ১৭৮১ সালে টিলম্যান হেনকিল কে জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে যশোর জেলায় নিয়োগ প্রদান করেন। ১৭৮৬ সালে যশোর কালেক্টর স্থাপিত হয় এবং হেনকিল প্রথম কালেক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
টিলম্যান দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে পূর্বাঞ্চলের সকল এলাকার রাজস্ব ব্যবস্থাপনার হেডকোয়ার্টার ছিল কলকাতা। টিলম্যান রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে সুশৃংখল করার জন্য যশোরে কালেক্টরেট স্থাপনের প্রস্তাব দেন এবং কোম্পানী তা গ্রহণ করে।১৭৯৩ সালের প্রশাসনিক পৃথকীকরণের পূর্ব পর্যন্ত কালেক্টর রাজস্ব আদায়সহ সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। ১৭৯৩ সালে কালেক্টরের ক্ষমতা থেকে জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পৃথকীকরণ করা হয়। লর্ড কর্নওয়ালিশ“দারোগা'”পদের বিচারিক ক্ষমতা রহিত করে ম্যাজিস্ট্রেটকে কম গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারী বিচারের ক্ষমতা প্রদান করেন। গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারীমামলার বিচারের জন্য “কোর্ট অব সার্কিট”গঠিত হয়এবং নবাবী আমলের"নাজিম”পদ বাতিল করে “নিজামত আদালত'' গঠন করা হয়। জেলার বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন স্থাপন করা হয়। জেলা পর্যায়ে জজ এবং মুনসেফ পদ সৃষ্টি করা হয়।
১৭৮১-১৭৮৯ সাল পর্যন্ত টিলম্যান হেনকিল দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় আদালতের বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পুলিশ বিভাগের ও নিয়ন্ত্রণকর্তা ছিলেন কর্নওয়ালিশের সময় সাময়িকভাবে ম্যাজিস্ট্রেটরিয়াল ক্ষমতা হারালেও পরবর্তীতে কালেক্টর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কম গুরুত্বপূর্ন ফৌজদারী মামলার বিচার এবং পুলিশ বিভাগের নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। দীর্ঘদিন যশোর জেলায় ইংরেজ এবং উপমহাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রেগুলেশন এলাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ডেপুটি কমিশনার বা ডিস্ট্রিক্ট অফিসার হিসেবে অভিহিত করা হয়। ডেপুটি কমিশনার একাধারে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা, কম গুরুত্বপূর্ন ফৌজদারী মামলার বিচার, পুলিশের নিয়ন্ত্রণ ও আইন শৃংখলা রক্ষার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনার জন্য কালেক্টর পদবী প্রাপ্ত হন।
ডেপুটী কমিশনার হিসাবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলার সকল বিভাগের কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি করতেন। তিনি তৎকালীন জেলা বোর্ডের পদাধিকার বলে সভাপতি ছিলেন। ডেপুটি কমিশনারকে তাঁর সাধারন প্রশাসন পরিচালনার সহযোগিতার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), রাজস্ব সংক্রান্ত কার্যাবলীতে সহযোগিতার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)এবং বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম/আইন শৃংখলা রক্ষার কার্যে সহযোগিতার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) নাম আরেকটি পদ সৃষ্টি করা হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস